ঝুঁকি নিয়ে লেগুনায় হেল্পার শিশুরা
শাহাদাত হোসেন
গাজীপুরের অনেক গুলো রুটে চলে লাগুনা আর এইসব লেগুনার অনেক কর্মীর বয়স ১৮ বছরের নীচে।পরিবারের অস্বচ্ছলতা আর দারিদ্রতাকে কেন্দ্র করে এই শিশুগুলো আজ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। এখানে কোন কোন শিশু হেল্পার আবার কোন কোন শিশুকে ড্রাইভার হিসেবেও কাজ করতে দেখা যায়।যার ফলে এই রুটে প্রায় ঘটে দূর্ঘটনা আর দূর্ঘটনায় পড়ার মধ্যে শিশু শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি।গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে মনিপুর এই রুটে চলাচল করে তিনশ লেগুনা আর এই লেগুনা গুলোতে কাজ করছে প্রায় ছয় থেকে সাতশ শ্রমিক এদের মধ্যে একতৃতীয়াংশই হল শিশু।যে বয়সে স্কুলের ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা আর সেই সময় এই হতদরিদ্র শিশু গুলোর পারিবারিক টানা-পরনে বাধ্য হয়ে এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে।
একটু ভুলের জন্য এই শিশুশ্রমিকদের দিতে হয় চরম মূল্য, কোন কোন ড্রাইভার ইচ্ছে মত মারে আবার কেউ কেউ বেতন দেয় না এভাবেই বলছিল ১৩ বছরের হেল্পার লিটন।
লিটন লেগুনায় কাজ করে দুই বছর ধরে আর লাগুনা দুর্ঘটনায় পড়েছে ৩ বার একবার তো হাতটাই ভাঙ্গে গিয়েছিলো তার ।লিটনের প্রতিদিনের সূর্য ওঠে চাপা কষ্ট নিয়ে। ৪ ভাই বোনের মধ্যে বড় সে।বাবা লেগুনা ড্রাইভার বাসায় টাকা দেয় না।লিটনের প্রতিদিনের আয় দুইশ আর মার একশ টাকা তা দিয়ে চলাতে হয় পুরো পরিবার।
পড়া-শুনার কথা জিজ্ঞেস করায়- লিটন বলল নাম লিখতে পারি কিন্তু পড়তে পারিনা পড়তে অনেক ইচ্ছা করে কিন্তু পারিনা, ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়ছিলাম তার পর আর পড়তে পারি নাই।একদিন তার স্বপ্ন ছিল অনেক বড় ডাক্তার হবে কিন্তু আজ তার স্বপ্ন একজন বড় ড্রাইভার হবে।
এই স্বপ্ন পরির্তনের আরেক রাজা এখানকারই হেল্পার জাকির।জাকিরের বয়স মাত্র ১২ বছর। জাকির মেধাবি ছাত্র ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত একটানা ৩ বছর রোল ১ ছিল তার, স্বপ্নও ছিল অনেক বড় হবার কিন্তু দারিদ্রতার কাছে তার সব স্বপ্ন হার মেনেছে।বাবার আদর কি জানেনা সে, বাবা মারা গেছে সেই ছোট বেলাতেই।মায়ের ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে যখন মা-ছেলের খরচ চলেনা তখন দু মুঠো ভাত আর থাকার জন্য কিছু টাকার যোগান দিতেই জাকিরের এত যুদ্ধ। জাকিরের মা জাকির কে পড়াতে চায় কিন্তু টাকা ! টাকা পাবে কোথায় । দু মাসের ঘর ভাড়া বাকি এখনও তাদের।
জাকিরের মা চোখ মুছতে মুছতে বলেন, আমার ছেলে সকালে ঘুম থেকে ওঠে জিজ্ঞেস করে, মা আমি কোনদিন স্কুলে যামু, আমি তখনও কিছুই উত্তর দিতে পারিনা।
জাকিরের ঘরে দুটো পাতিল, একটা জগ আর একটা মশারি ছাড়া কিছুই নেই।জাকির এখনও স্বপ্ন দেখে সে আবার একদিন স্কুলে যাবে।
শিশু শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যাপারে “সড়ক পরিবহন ও মালিক সমিতি” এর সভাপতি সুলতান সরকার এর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি এই সম্পর্কে বলতে রাজি হয়নি।
এই শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণধার, এরাই আগামী দিনের স্বপ্ন, পৃথিবীর সব শিশু হোক নিরাপদ। লিটন, জাকিরের মত শিশু শ্রমিকরা ফিরে পাবে তাদের স্বপ্ন।আর আমরা পাব বুদ্ধি দীপ্ত প্রজন্ম এই প্রত্যাশা আমাদের।
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে